প্রায় ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলায় ফের চার সপ্তাহের আগাম জামিন পেলেন চাঁদপুরের ‘বালুখেকো’ ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান। বুধবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে সেলিম খানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী চার সপ্তাহ পর সেলিম খানকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এর আগে হাইকোর্ট বেঞ্চ সেলিম খানকে তিন সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়ে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করায় জামিন বাতিল হয়।
ঢাকা মহানগর পিপি আবদুল্লাহ আবু জনপদ সংবাদ কে বলেছিলেন, আত্মসমর্পণ না করে সেলিম খান আদালত অবমাননা করেছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিসহ যেকোনো সময় তাকে গ্রেপ্তারের সুযোগ আছে বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, সেলিম খান আত্মসমর্পণ না করে নানা ধরনের ফাঁকফোকর খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি পুনরায় হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। ১৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) তিনি জামিন আবেদনটি করেছিলেন বলে জানা যায়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী জানান, তিন সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালত আত্মসমর্পণ করাতে না পারায় সেলিম খান আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তার আইনজীবী জানান, আগের আদেশে মামলা নম্বর এবং কোর্ট সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে সংশোধনীসহ পুনরায় আবেদন করেন সেলিম খান।
চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নং লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খান উচ্চ আদালতের দৃষ্টিতে একজন ঘৃণিত ব্যক্তি। বালু উত্তোলন এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত পৃথক দুটি রিট মামলায় উচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে রায় দেন। রায়ে বালু উত্তোলনের দায়দায়িত্ব নিরুপণ করে সরকারের কোষাগারে ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় তাকে।
অপরদিকে দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসায় আদালত সেলিম খানকে ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। তাকে অত্যন্ত ঘৃণিত ব্যক্তি আখ্যা দিয়ে এমন জনপ্রতিনিধি কীভাবে পদে থাকেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
গত ১৪ আগস্ট সেলিম খানকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তিন সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আদালত। এর আগে ১ আগস্ট তার বিরুদ্ধে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক। তার সম্পদের হিসাব চাইলে মাত্র ৬৬ লাখ টাকার সম্পদের বিবরণী দাখিল করেন দুদকের কাছে।
পরে দুদকের অনুসন্ধানে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা অবৈধ সম্পদের তথ্য মেলে। মামলায় বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ওই মামলায় সেলিম খান গ্রেপ্তার এড়াতে উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। তিনি নানা টালবাহানা করে আত্মসমর্পণ না করে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন।
আইনজীবীরা জানান, এবার চার সপ্তাহ পেরোলে সেলিম খানকে আত্মসমর্পণ করতেই হবে। অন্যথায় আদালত নতুন আদেশ জারি করতে পারেন।
প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির আশ্রয় নেন সেলিম খান। তিনি এবং তার ছেলে-মেয়েসহ অন্য সহযোগীরা জমির অস্বাভাবিক মূল্য তৈরি করেন। এতে ভূমি অধিগ্রহণে সরকারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি টাকা। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের তদন্তে ধরা পড়ে।
ঘৃণিত ও নিন্দিত এই চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকেও আজীবনের জন্য বহিষ্কার হন। অবৈধ টাকা দিয়ে তিনি সব কিনে নিতে পারেন- এমন কথা ছড়িয়ে দেন। কিন্তু আদালত তার বিরুদ্ধে এবার অনেকগুলো আদেশ জারি করেছেন। এছাড়া দুদকের শক্ত অবস্থানের কারণে কাউকে ম্যানেজ করাও তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। যে কারণে তার বিরুদ্ধে মামলাসহ জোরালো তদন্ত শুরু হয়েছে।