বেনাপোল সাদিপুরের কৃষক শাহাজাহান হত্যা ও সোনা চোরাচালানের আলাদা মামলায় দুইজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছে যশোরের আদালত। মঙ্গলবার সিনিয়র দায়রা জজ ও সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল জজ আদালতের বিচারক মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক ও বিশেষ দায়রা জজ ও স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সামছুল হক আলাদা রায়ে এ আদেশ দিয়েছেন।
সাজাপ্রাপ্ত আলমগীর হোসেন আলম বেনাপোলের সাদিপুর গ্রামের ছেউদ উদ্দিন ও পালক পিতা মোহাম্মদ আলীর ছেলে এবং জিহাদ আলী সরদার সাদিপুর গ্রামের মধ্যপাড়ার তাহাজ্জত আলী সরদারের ছেলে। সাজাপ্রাপ্ত দুইজনই পলাতক রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিপি অ্যাডভোকেট এম ইদ্রিস আলী ও বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে চৌগাছার ৪৯/বি শাহজাদপুর ক্যাম্পের বিজিবির সদস্যরা সাদিপুর গ্রামের মসজিদের সামনে অবস্থান নেয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে একজন লোক মসজিদের সামনে এসে বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয়। আটক জিহাদ আলী সরদারের দেহ তল্লাশি করে হাফপ্যান্টের পকেটে রাখা ১০ পিচ সোনার বার উদ্ধার করা হয়। যার ওজন ১ কেজি ১৬৬ গ্রাম। এব্যাপারে বিজিবির নায়েক সুবেদার আব্দুল মালেক বাদী হয়ে চোরাচালান দমন আইনে আটক ব্যক্তিকে আসামি করে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক নজরুল ইসলাম। এ মামলার সাক্ষী গ্রহণ শেষে আসামি জিহাদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন।
অপর দিকে, বেনাপোলের সাদীপুর গ্রামের কৃষক শাহাজাহান একই গ্রামের আলমগীরের কাছে ধারের ১০ হাজার টাকা পেতেন। পাওনা টাকা চাওয়ায় আলমগীর ক্ষিপ্ত হয় শাহাজাহানের উপর। ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শাহাজাহান গ্রামের পশ্চিম মাঠের জামিতে পানি দিতে যান। শাহাজাহান মাঠে গিয়ে দেখেন আলমগীরও তার জমিতে পানি দিচ্ছে। সাড়ে ৫টার দিকে শাহাজাহান জমিতে পানি দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে রাস্তার কালভার্টের উপর পৌঁছালে আলমগীর ধাওয়া করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এরমধ্যে আশেপাশের লোক ঘটনাস্থলে আসলে আলমগীর ভারতের দিকে পালিয়ে যায়। এব্যাপারে নিহতের ছেলে ইউসুফ বাদী হয়ে আলমগীরকে আসামি করে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে হত্যার সাথে জড়িত থাকায় ওই বছরের ৪ জুলাই আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ওমর শরীফ। এ মামলার দীর্ঘ সাক্ষী গ্রহণ শেষে আসামি আলমগীর হোসেন আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।