অভয়নগরের শিল্প ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়া নৌবন্দরে নোঙর করা দুটি লাইটার জাহাজ থেকে লুট করা ৭৯ টন (১৫৬৬ বস্তা) ডিএপি সার ও নগদ এক লাখ ১৬ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে যশোর ডিবি পুলিশ। একই সাথে এ ঘটনায় জড়িত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোম ও মঙ্গলবার খুলনা বিভাগের ৫ জেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন যশোর ডিবি পুলিশের ওসি রূপম কুমার সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, সরকারের ভর্তুকি দেয়া ডিএপি সার আমদানির দরপত্র পায় যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার মেসার্স আফিল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটি চীন থেকে ১৩শ’ মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানি করে মোংলা বন্দরে সার খালাসের পর তা দুটি লাইটার জাহাজের মাধ্যমে অভয়নগর নওয়াপাড়া নৌ বন্দরে আনা হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর গভীররাতে বন্দরের নোঙর করা লাইটার জাহাজ থেকে কর্মীদের সহায়তায় চোরেরা ১২০ টন সার চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরদিন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভয়নগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং- ১৬ তাং- ১৪-৯-২০২২।
ডিবি পুলিশের ওসি রূপম কুমার সরকার আরো জানান, মামলা দায়েরের পর সার উদ্ধার ও জড়িতদের আটকে তদন্ত শুরু করে ডিবি পুলিশ। এরপর সোমবার ও মঙ্গলবার যশোরের নওয়াপাড়া, বাগেরহাট, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ ও ঝিনাইদহে অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া ১২০ টন সারের মধ্যে ৭৯ টন সার উদ্ধার করা হয়। এ সময় জড়িত ৯জনকে গ্রেফতার করা হয়। জড়িতদের আস্তানা থেকে এক লাখ ১৬ হাজার টাকা উদ্ধার হয়। তিনি আরো জানান, আটককৃতদের মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটককৃতরা হলো, যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাহিরঘাট এলাকার নবাব আলী গোলদারের ছেলে হুমায়ূন কবীর, তেঁতুলতলা মসজিদ এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে সোহাগ হোসেন, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার তারাবুনিয়া গ্রামের অমল শিকদারের ছেলে অনিমেষ শিকদার, খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কলমিগুনিয়া গ্রামের সুধান্ন সরকারের ছেলে ভুপাল সরকার, পিরোজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম শিকারপুর গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে ফয়সাল মোরশেদ সজীব, ঝাটকাটি গ্রামের বিমল সরকারের ছেলে লিখন সরকার, কুমিরমারা গ্রামের মোবারক আলী শিকদারের ছেলে আক্কাস আলী শিকদার, যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামের আব্দুর রহিম মোড়লের ছেলে তরিকুল ইসলাম ও বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মেছেরশাহ সড়কের আবুল কালামের ছেলে পারভেজ আহমেদ রাজু।
নওয়াপাড়া সার , খাদ্য, শস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল গনি সরদার ও সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল হোসেন বলেন, নওয়াপাড়া একটি শিল্প বন্দর এই শিল্প বন্দরের কিছু সংখ্যা চোর ও ডাকাতরা দিনে ও রাতে অস্ত্র ঠেকিয়ে জাহাজের সার লুট করে নিচ্ছে। এ ঘটনাকে ডাকাতি বলে আখ্যায়িত করেছেন তারা। আমরা গত ৩০ বছর যাবৎ এ ব্যবসায় লিপ্ত থাকা অবস্থায় শত শত কোটি টাকার মাল চুরি হয়েছে।
নোয়াপাড়া গ্রুপের সেলস্ এন্ড মার্কেটিং হেড মিজানুর রহমান জনি বলেন, নোয়াপাড়া টের্ডাস একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। ৩০ বছর ধরে এ মোকামে ব্যবসা করে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু জায়গা থেকে স্টাফদের বেঁধে রেখে ও অস্ত্র ঠেকিয়ে সার দীর্ঘ দিন ধরে লুট করছে। এ চক্র এই বন্দরে অনেক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করছে।
এ ব্যাপারে আফিল গ্রুপের পরিচালক মাহবুব আলম লাবলু বলেন, আমাদের দুইটা ছোট জাহাজ থেকে প্রায় ১৩০ টন সার দুবৃর্ত্তরা লুট করে। এক কথায় তারা ডাকাতি করে। মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ৪০/৪৫ জন সন্ত্রাসী এই সার লুট করে তাদের ট্রলারে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ চক্রটি বিভিন্ন জাহাজ থেকে আমদানিকৃত পণ্য লুট করে নিচ্ছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমদানিকারকরা এ বন্দর ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করছেন। তারা মুখ ফিরিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।