প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা ঘিরে যশোর স্টেডিয়ামসহ পুরো শহরকে নতুনরূপে সাজানো হচ্ছে। এ নিয়ে সরগরম পুরো জেলা। ব্যস্ত সময় পার করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। জনসভায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষের জমায়েতের লক্ষ্য নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। চলছে স্মরণকালের জনসমাগমের প্রস্তুতি।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, পুরো যশোর শহর জনসভাস্থলে পরিণত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন ও সফলতার বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে সাধারণ মানুষের মাঝে নতুন আশা জেগেছে। জনসভা সফল ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রধানমন্ত্রীর আসার আগের দিন ও জনসভার দিন কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকবে জেলা শহর ও শহরতলী। এ লক্ষ্যে গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন উপ-কমিটি। তারা যৌথভাবে জনসভা সফলের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ২৪ নভেম্বর যশোরে দলীয় জনসভায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে জনসভা জনসমুদ্রে রূপ দিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী পর্যন্ত সবাই একযোগে কাজ করছেন। স্টেডিয়ামের গ্যালারি লাল-সবুজ রঙে রাঙানো হয়েছে। বিশাল আকৃতির নৌকা বানিয়ে সেটিকে করা হচ্ছে জনসভার মঞ্চ। শহরের সড়কগুলো সংস্কার ও দেয়ালগুলোতে লাগানো হয়েছে নতুন রঙ। প্রতিনিয়ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর যশোরে আগমনের বার্তায় শুধু যশোর নয়, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
জনসভায় পাঁচ লাখের বেশি জনসমাগম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন। তিনি বলেন, ‘গোটা শহরে সেদিন পা রাখার জায়গা পাওয়া যাবে না। জেলা ছাড়াও খুলনা বিভাগের সবকটি জেলা ও গোপালগঞ্জ থেকে নেতাকর্মীরা আসবেন। সেক্ষেত্রে তিন হাজারের বেশি যানবাহন ব্যবহার হবে, যার বেশিরভাগই স্বতঃপ্রণোদিত এবং কিছু গাড়ির ভাড়া পরিশোধ করবো আমরা।’
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল মজিদ বলেন, ‘নৌকার আদলে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। নৌকার পরিমাপ ১২০ ফুট বাই ৪০ ফুট। তবে স্টেজ করা হবে ৮০ ফুট বাই ৪০ ফুট। মঞ্চে ৭৬ ফুট বাই ১০ ফুট ব্যানার দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ব্যানারের কাজ সম্পন্ন করতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা কাজ শুরু করেছেন। আমি সার্বক্ষণিক জনসভাস্থলে আছি। আশা করছি, মঙ্গলবারের মধ্যে মঞ্চের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুখেন মজুমদারকে আহ্বায়ক করে শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জননেত্রীর জনসভা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে ৪০০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সমাবেশস্থল, সমাবেশস্থলের প্রবেশমুখ ও জনসভায় আগতদের সহযোগিতা করতে শহরের প্রবেশমুখে থাকবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, জনসভা উপলক্ষে এরই মধ্যে পোস্টারিং, মাইকিং ও প্রচার-প্রচারণা চলছে। সভা-সমাবেশের বাইরে সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জনসভা সফল করতে প্রতিনিয়ত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে মূল দল ছাড়াও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জনসভা সফলের লক্ষ্যে বিশেষ প্রস্তুতি সভা করেছে।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, যশোর বিমানবন্দর থেকে যে সড়কপথে প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে পৌঁছাবেন, সেই সড়কে থাকা কয়েকশ তোরণ ইতোমধ্যে সরানো হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনের দেয়ালে নতুন রঙ করা হয়েছে। সড়কগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সংস্কার করে ঝকঝকে করা হয়েছে। দেয়ালে প্রধানমন্ত্রীর বাণী লেখার কাজ চলছে। শহরের মুজিব সড়ক, সিভিল কোর্টের মোড়, শহীদ সড়ক, দড়াটানা মোড়, পুলিশ লাইনস ও বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।
দলের নেতাকর্মীরা জানান, যশোরে স্মরণকালের বৃহৎ জনসমাগম ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ। জনসভায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষের সমাগমের লক্ষ্য রয়েছে নেতাকর্মীদের। জনসভায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। ফলে নিরাপত্তা জোরদার, ট্রাফিক ব্যবস্থা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে।
পাঁচ হাজার যানবাহন পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণ
যশোর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমন্বয়ে ইতোমধ্যে বিশাল গণজমায়েতের জন্য বাস, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস মিলিয়ে পাঁচ হাজার যানবাহন আসা ও পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণ করেছে ট্রাফিক বিভাগ। চার হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ১০টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এমপি-মন্ত্রীদের জন্য চারটি স্থান, অন্য ভিআইপিদের জন্য একটি স্থান ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের বাস, প্রাইভেটকার এবং মাইক্রোবাস পার্কিংয়ের জন্য আরও পাঁচটি পার্কিং এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে সীমানা বাড়ানো হবে। জনসভার দিন শহরে কোনও যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। শহরের অংশে হেঁটে সবাইকে চলাচল করতে হবে। অবশ্য হেঁটে চলাচলে রোডম্যাপ করা হচ্ছে।
এদিকে, যশোরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় প্রথমবারের মতো আনা হয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী কলরেডি কোম্পানির মাইক। জনসভার ভাষণ প্রচারে শহরজুড়ে থাকবে এই কোম্পানির দুই শতাধিক মাইক। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কোম্পানির মাইকে ভাষণ দিয়ে জাতিকে জাগ্রত করেছিলেন, সেই কলরেডির মাইকে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। নিখুঁত সাউন্ড সিস্টেম পেতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
সোমবার দুপুরে শহরের মুসলিম একাডেমির সামনে বিদ্যুতের খুঁটিতে মাইক বাঁধছিলেন অপারেটর ফারুহ হোসেন। তিনি বলেন, ‘রবিবার থেকে মাইক লাগানো শুরু হয়েছে।