চাঁদপুরে মেঘনা নদী থেকে ৪ কোটি টাকার চিনি পাচারের অভিযোগে:আটক-১১
স্টাফ রিপোর্টারঃ লাইটারেজ জাহাজ হতে প্রায় ৪ কোটি টাকার চিনি চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মেঘনা নদীতে পাচারের অভিযোগে ১১ জনকে আটক করেছে নৌপুলিশ এর খবর পাওয়া গেছে।
২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মোহনপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মনিরুজ্জামান।
নৌ পুলিশ জানায়, আকিজ গ্রুপ ভারত থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পণ্যবাহী দেওয়ান মেহেদী-২ নামের লাইটারেজ জাহাজে করে ২০ হাজার ৩০০ বস্তা চিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরে নৌপথে মোহনপুরে মেঘনা নদীতে নোঙ্গর করে ৮ হাজার বস্তা চিনি রাতের অন্ধকারে চোরাকারবারি জাহাঙ্গীর আলম মরু গাজী(৫৬), তার সহযোগী রঘুনাথপুর এলাকার শাহজাহান, পুরাণবাজারের ফজল ও ১নং ঘাটের আলী খার মাধ্যমে পাচারের পর অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। এই ঘটনায় আকিজ গ্রুপ অব কোম্পানীর পক্ষ থেকে মতলবের মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে মামলা হয়।
মোহনপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, দেওয়ান মেহেদী-২ লাইটারেজ জাহাজের মাস্টারসহ ১১ জনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চাঁদপুরে চিহ্নিত চোরাকারবারি জাহাঙ্গীর আলম মরু গাজীসহ চারজনের নাম প্রকাশ পেয়েছে।
নৌ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মরু গাজী গং আকিজ গ্রুপের ৮ হাজার বস্তা চিনি সেই লাইটারের জাহাজ থেকে স্টীলবডি ট্রলারে নামিয়ে ফরিদপুরের বাকিতুল্লাহ বিশ্বাসের কাছে বিক্রি করে। পরে চিনিগুলো ফরিদপুর, মাদারীপুর ও কুষ্টিয়ায় পাচার করে দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, চোরাকারবারিদের গডফাদার হচ্ছে চাঁদপুরের জাহাঙ্গীর আলম গাজী ওরফে মরু হাজী। তিনি চাঁদপুর স্ট্যান্ড রোডের মৃত কেরামত গাজীর সন্তান। তিনি দীর্ঘ বছর যাবৎ নদীতে লাইটারেজ জাহাজ থেকে বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানির মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোডে তার নিজস্ব পাঁচতলা আলিশান বাড়িসহ নামে বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙরে এমভি লয়েলিটি নামের একটি মাদার ভেসেল থেকে আকিজ গ্রুপের ১ হাজার ১৫ টন চিনি খালাস করে গত ১৫ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা করেছিল এমভি দেওয়ান মেহেদী-২ নামের লাইটারেজ জাহাজ। মোট ২০ হাজার ৩শ’ বস্তা চিনি ছিলো জাহাজটিতে। কিন্তু বহির্নোঙরে খালাস নেয়ার পরও যথাসময়ে গন্তব্যে না পৌঁছায় চিনির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। আমদানিকারকদের পক্ষে স্কট থাকার পরও কিভাবে জাহাজটি থেকে চিনি লোপাট হলো তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে!
যদিও পাল্টাপাল্টিভাবে জাহাজের নাবিকরা বলছে, সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত দল তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চিনিগুলো লুটে নিয়েছে। কিন্তু পরিবহনের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদারের অভিযোগ, জাহাজের নাবিকরাই সুকৌশলে এসব চিনি বিক্রি করে দিয়েছে। মেঘনার ষাটনল ও এখলাসপুর নিয়ে চিনিগুলো লোপাট করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী জাহাজ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ বলেন, চিনি পরিবহনের জন্য লাইটারেজ জাহাজটির বরাদ্দ নেয়া হয়েছিল গত ১২ ডিসেম্বর। এখন মামলা হয়েছে।
জাহাজটির মালিকানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এমএসটি মেরিন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক প্রদীপ চক্রবর্ত্তী বলেন, জাহাজের সকলকে আটক করেছে নৌপুলিশ। নিরাপত্তার জন্য স্কট থাকার পরও কীভাবে কোটি কোটি টাকার চিনি খোয়া গেল-তা তদন্ত করছে নৌপুলিশ।
চাঁদপুর নৌ থানার ওসি মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আসামীদের ধরতে তৎপর রয়েছি। দ্রুতই সব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে।