যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বাদিয়াটোলায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্ত্রী রুনা বেগমকে তালাক দিয়েছেন প্রবাসী গোলাম মোস্তফা। আর তার জেরে রুনার নেতৃত্বে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গোলাম মোস্তফার ভাই মহাসিন ও তার স্ত্রী সামসুননাহারকে মারধর করে ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখে। ভুক্তভোগী ওই দম্পত্তি ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। আহত দম্পতি যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এই ঘটনায় গত শনিবার রাতে রুনাসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন, বাদিয়াটোলা গ্রামের জসিম উদ্দিনের স্ত্রী কুলসুম বেগম, মৃত আক্কাসের ছেলে খাইরুল, সুলতানের ছেলে সোহাগ, ছমির মোল্লার ছেলে শফি ও আবেদের ছেলে আনিচ।
লিখিত অভিযোগে সামসুননাহার উল্লেখ করেছেন, তার ভাসুর গোলাম মোস্তফা বিদেশ (সৌদি আরব) থাকাকালীন স্ত্রী রুনা বেগমের কাছে প্রায় ২০ লাখ টাকা পাঠান। তিনি অন্য আসামিদের সহায়তায় ওই টাকা আত্মসাত করেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মোস্তফা দেশে ফেরার পর টাকার হিসাব চাইলে রুনা টালবাহানা শুরু করেন। যা নিয়ে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রুনাকে তালাক দেন গোলাম মোস্তফা।
সামসুননাহার অভিযোগে আরও উল্লেখ করেছেন, এ ঘটনার পর রুনা বেগমের সন্দেহ হয় তার স্বামী গোলাম মোস্তফা আমাদের (সামসুননাহা ও মহাসিন) কথা মতো তাকে তালাক দিয়েছেন। মিথ্যা দোষারোপ করে আমাদের খুন জখমের হুমকি দেয়া হচ্ছিলো। এরই জের ধরে ২৫ মার্চ শনিবার বিকেল ৫টার দিকে রুনার নেতৃত্বে খাইরুল, কুলসুম বেগম, সোহাগ, শফি, আনিচসহ অপরিচিত ৪-৫ ভাড়াটিয়া দুর্বৃত্ত মিলে আমার বাড়ি হামলা চালায়। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্বৃত্তরা আমার স্বামী মহাসিনকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। স্বামীকে রক্ষার জন্য আমি এগিয়ে গেলে খাইরুল আমার মুখের বাম পাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। এসময় আমি মাটিতে পড়ে গেলে অন্যরা মারধর করে। দুর্বৃত্তরা আহত অবস্থায় আমাদের স্বামী স্ত্রীকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে ৯৯৯ এ কল করে সহায়তা চাইলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমাদের উদ্ধার করেন। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
সাজিয়ালী পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই তৌফিক জানিয়েছেন, মহাসিন ৯৯৯-এ কল করে জানান দুর্বৃত্তরা তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে স্বামী স্ত্রীকে মারধর করার পর ঘরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এমন একটি মেসেজ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের তালা খুলে মহাসিন ও তার স্ত্রী সামসুননাহারকে উদ্ধার করা হয়। তাদের শরীরে জখমের চিহ্ন ছিলো। পুলিশ যাওয়ার আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় আটক করা সম্ভব হয়নি।
এ এস আই তৌফিক আরও জানান, আহত দম্পতিকে থানায় অভিযোগের পরামর্শ দিয়েছিলাম। অভিযোগের কপি হাতে পেলে তদন্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, বাদিয়াটোলা গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার গোলাম মন্ডলের ছেলে প্রবাসী গোলাম মোস্তফা তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী রুনা বেগমের বিরুদ্ধে শনিবার (২৫ মার্চ) রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘ ৬ বছর পর সৌদি আরব থেকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফিরেছেন। বিদেশ থেকে পাঠানো ২০ লাখ টাকার কোন হিসেব দিতে পারেননি রুমা। হিসেবে চাইলে নানা হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছিলো। এ বিষয়ে চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ করার পরও রুনা সেখানেও হাজির হননি। বরং তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিনি রুনাকে তালাক দেয়ার পরও বাড়ি ছাড়ছেন না। অন্যায়ভাবে তার বাড়িতে বসবাস করে ক্ষতি করার ষড়যন্ত্রে মেতে রয়েছে। ঘটনাটি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন গোলাম মোস্তফা।
এই বিষয়ে রুনা বেগম মুঠোফোনে জানান, বিদেশ থেকে স্বামীর পাঠানো টাকা দিয়ে তিনি ঘর নির্মাণ করাসহ সংসারে ব্যয় করেছেন। ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগে গোলাম মোস্তফা তাকে তালাক দিয়েছেন। বর্তমানে স্বামী গোলাম মোস্তফা, দেবর মহাসিন ও তার স্ত্রী সামসুননাহার মিলে অবরুদ্ধের নাটক সাজিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।