যশোরের চৌগাছা উপজেলার স্বর্পরাজপুর গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র মারুফ (১৩) হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি সহিদুল করিম ও মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত বুধবার এই রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, স্বর্পরাজপুর গ্রামের মৃত আজহার আলী মন্ডলের ছেলে সুলাইমান মন্ডল, গওহর আলীর ছেলে আবুল বাশার, নুর ইসলাম ওরফে লালুর ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক (হত্যাকাণ্ডে নাম আসার পর বাবুকে বহিষ্কার এবং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করা হয়) বাবু ও মিজানুর রহমানের ছেলে আজাহারুল ইসলাম ওরফে বুড়ো । যাবজ্জীবন আসামি হলেন গ্রামের মৃত আজহার মন্ডলের ছেলে এবং সাবেক ইউপি সদস্য হযরত আলী মন্ডল।
চৌগাছা উপজেলার জগদিশপুর ইউনিয়নের স্বর্পরাজপুর গ্রামের মহিদুল ইসলাম তোতার ছেলে ও স্বর্পরাজপুর দাখিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্র মারুফ ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট নিখোঁজ হয় । এরপর ১৬ আগস্ট চৌগাছার কান্দি গ্রামের একটি মেহগনি বাগান থেকে তার মাথাবিহীন হাত-পা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন মারুফের মাতা আবেরুন নেছা সাতজনের নাম উল্লেখসহ ও অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়। মামলাটি যশোর আদালত থেকে খুলনায় স্থানান্তর করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৬ মে খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল হত্যা মামলাটির রায়ে ১০ আসামিকে খালাস দেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে মারুফের মাতা ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিল আংশিক মঞ্জুর করে বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার রায় দিয়েছেন। হাইকোর্টে রায়ে সুলাইমান মন্ডল, আবুল বাশার, মো. বাবু ও আজাহারুল ইসলাম ওরফে বুড়োকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। হজরত আলি নামে আরেক আসামিকে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। আপিলকারীর আইনজীবী জানান, সাজাপ্রাপ্ত এই ৫ জনসহ ১০ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত।
আদালতে আপিলকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম এ মুনতাকিম ও চৌধুরী সামসুল আরেফিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।
রায়ের পর মামলার নিহত মারুফের মাতা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সৎ ভাতিজা আমার ছোট ছেলে মারুফকে (১৩) ডেকে নিয়ে যায়। সাত দিন পর বাগানে তার শরীরের টুকরো টুকরো অংশ পাই। খুলনার আদালত থেকে সব আসামি বেকসুর খালাস পায়। স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। তাই ছেলে হত্যার বিচার পেতে হাইকোর্টে আপিল করেছিলাম। হাইকোর্ট চারজনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এই রায়ে আমি সন্তুষ্ট। কার্যকর হলে খুশি হব।
রায়ের পর আইনজীবী চৌধুরী সামসুল আরেফিন সাংবাদিদের জানান, মারুফকে কারা হত্যা করেছিল আসামি আজাহারুল ইসলাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে। এই জবানবন্দি সাক্ষী দিয়ে সমর্থিত। অথচ বিচারিক আদালত সেটি বিবেচনায় না নিয়ে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বেকসুর খালাস দেন। তিনি বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, চাক্ষুষ সাক্ষীর সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট চারজনকে মৃত্যুদণ্ড ও বয়স বিবেচনায় একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।