৩০ মাফিয়ার হাতে জিম্মি কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প। মাদক ইয়াবা-আইস কারকার, অস্ত্র চোরাচালান, অপহরণ, খুন, গুম, ডাকাতিসহ অন্তত ১২ ধরনের অপরাধের নেতৃত্ব দিচ্ছে এরা। রোহিঙ্গাদের ৩৩টি ক্যাম্পে এদের কথাই শেষ কথা। এদের নির্দেশে যেমন লাশ পড়ে, এদের নির্দেশেই অরাজকতা চলছে প্রতিটি ক্যাম্পে।মিয়ানমারের নিষিদ্ধ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ, জমিয়তুল মুজাহিদীন ও আল ইয়াকিনের নেতা এরা। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে এসে এরা এ সংগঠনের কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এদের প্রত্যেকের রয়েছে অবৈধ অস্ত্রের ভান্ডার। অস্ত্রের ভান্ডারে রয়েছে অত্যাধুনিক একে ৪৭সহ চায়নিজ ভারী অস্ত্র।এরা প্রত্যেকেই অস্ত্র পরিচালনায় প্রশিক্ষিত। নিজেরাও তাদের সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আর এ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পাহাড়ের গহিনে। যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কখনো পৌঁছাতে পারেনি।এরা প্রত্যেকেই অস্ত্র পরিচালনায় প্রশিক্ষিত। নিজেরাও তাদের সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আর এ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পাহাড়ের গহিনে। যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কখনো পৌঁছাতে পারেনি।সরেজমিনে জানা যায়, বর্তমানে শিবিরগুলোয় আল ইয়াকিন নামে একটি সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রুপ বেশ সক্রিয়। আল ইয়াকিনের বেশির ভাগ সদস্য আগে আরএসও নামক সংগঠনে ছিল। আল ইয়াকিনকে অনেক রোহিঙ্গাই আরসা হিসেবে বলে থাকে। সংগঠনটিতে রয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা তরুণ ও যুবক। সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছে আল ইয়াকিন বা আরসা নামের সশস্ত্র সংগঠনটি একটি বড় ধরনের আতঙ্কের নাম। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের কাছে আরেক ত্রাস হিসেবে পরিচিত হচ্ছে ‘ডাকাত বাহিনী’। ডাকাত বাহিনীটি আবার ‘নবী হোসেন বাহিনী’ নামেও পরিচিতি পেয়েছে। প্রায় প্রতিটি শিবিরেই রয়েছে রোহিঙ্গা ডাকাত নবী হোসেন বাহিনীর তৎপরতা। মালয়েশিয়া থেকে ফিরে আসা রোহিঙ্গা নবী হোসেন, ইউনুস, মৌলভি আইউবসহ আরও বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার নেতৃত্বে থাকা বাহিনীটির প্রত্যেকের কাছেই রয়েছে অস্ত্রশস্ত্র। এ বাহিনীর সদস্যরা রাতে এমনকি দিনেও ডাকাতি, ছিনতাইসহ খুনখারাবিতে জড়িত। তবে তিনি এখন আল ইয়াকিনের নেতা। তাকে ধরতে বিজিবি ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। নবী হোসেনসহ এ ৩০ মাফিয়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে সুড়ঙ্গ করে অবস্থান করত। যাদের সাহায্য করেন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীরা। এরা এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। ব্যাপক অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে এ ৩০ মাফিয়া সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।
হাফিজ ফজলুল কবির। বয়স ৪৫। তার জন্মস্থান ও স্থায়ী ঠিকানা মিয়ানমারের মংডু হাজিবিল। তিনি কোরআনে হাফেজ এবং সশস্ত্র সংগঠন আরসার নায়েবে আমির। উখিয়ার শরণার্থী শিবির ১ নম্বর বালুখালী ৮/ই ক্যাম্পের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি ও আইস পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তিনি অত্যাধুনিক রাইফেল ৪৭ চায়নিজ জি-থ্রি ও জি-ফোর অস্ত্র চালনায় পারদর্শী।
মাওলানা হামিদ হোসেন। ডাকনাম সাহেব। তার স্থায়ী ঠিকানা এবং জন্মস্থান যুম্মনখালি। তিনি কোরআনে হাফেজ। আরসার সক্রিয় সদস্য। বালুখালী ক্যাম্পের ব্লক জিতে বর্তমানে বসবাস করেন। অত্যাধুনিক রাইফেল একে ৪৭ চায়নিজ জি-থ্রি ও জি-ফোর অস্ত্র চালনায় পারদর্শী।
হাফেজ নুর মোহাম্মদ। বয়স ৩২। তার জন্ম এবং স্থায়ী ঠিকানা মিয়ানমারের মংডুর লেডিন। বালুখালী শিবিরের ১৭ নম্বর ব্লকের ৮/ই ক্যাম্পে তিনি বসবাস করেন। অত্যাধুনিক রাইফেল একে ৪৭ চায়নিজ জি-থ্রি ও জি-ফোর অস্ত্র চালনায় পারদর্শী।
মংডুর হায়েখালীর সানাউল্লাহ, জামান্নার রফিক, মিয়ানমারের কিউয়ের বাসিন্দা ওস্তাদ খালিদ, হায়ছোটারার মাস্টার ইউনুস, মংডুর নায়চাডংয়ের মাওলানা জামালসহ ৩০ জন মাফিয়া রয়েছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।